শিশুদের মনস্তত্ত্বে ছাপ ফেলতে পারে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের অভিজ্ঞতা

৩ জানুয়ারী, ২০১৮

শিশুদের সার্বিক উন্নতির জন্য তাদের মানসিক পরিস্থিতির গুরুত্ব অপরিসীম। ইদানীং হারিকেনের আঘাতে আমেরিকার বহু জায়গা ক্ষতির মুখে পড়েছে। টেক্সাসে ‘হার্ভি’ নামে, ফ্লোরিডা ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ‘ইরমা’ বা পর্তো রিকো-তে ‘মারিয়া’ –প্রত্যেকটি হারিকেনেই বিপুল সংখ্যক পরিবার এবং অবশ্যম্ভাবী শিশুদের ঘরছাড়া হতে হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের পরে যে ব্যাপকমাত্রার ক্ষয়ক্ষতি, সামনে দাঁড়িয়ে চাক্ষুষ করেছে প্রতিটি শিশু। তাদেরই সবচেয়ে বেশী মানসিক সাহায্য প্রয়োজন। এমনকি ক্যাটেগরি ৪ বা ৫-এর মতো ভয়ঙ্কর হারিকেনের অভিজ্ঞতাও তাদের আছে।

মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ববিদ অ্যানে লা গ্রেসা’র গবেষণার বিষয় ছিল মূলত ১৯৯২ সালে দক্ষিণ ফ্লোরিডাতে আছড়ে পড়া হারিকেন ‘অ্যান্ড্রিউ’-র সামাজিক প্রভাব নিয়ে। বিশেষত শিশুরা কীভাবে সেই বিপর্যয়ের রেশে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল, তা নিয়ে।

গ্রেসা’র সাথে পোস্ট-ট্রমাটিক-স্ট্রেস-ডিসঅর্ডার নিয়ে কাজ করেছেন ওনার ছাত্র ব্রেঅ্যান দানজি। এই পদ্ধতিতে করা গবেষণায় অতি দ্রুত সেই বাচ্চাদের চিহ্নিত করা সম্ভব যাদের মানসিক সাহায্য প্রয়োজন।

তবে সুখকর খবর এই যে অধিকাংশ শিশুই তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে সেই বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরেও। যদিও, বিপন্নতা প্রকাশের ভঙ্গি শিশুদের ক্ষেত্রে পৃথক।

গবেষণাপত্রটি ইন্টারন্যাশানাল জার্নাল অফ ক্লিনিকাল অ্যান্ড হেলথ সাইকোলজি পত্রিকায় সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণা অনুযায়ী, টেক্সাসের গাল্ভেস্টোন অঞ্চলের ছয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭-১১ বছরের ৩২৭ জন শিশুকে নিয়ে সমীক্ষা করা হয়েছিল। তারা প্রত্যেকেই ২০০৮ সালের ক্যাটাগরি ২ হারিকেন ‘ইকা’ ও তার ফলে তৈরি হওয়া ধসের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছে। পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার বা সংক্ষেপে পিটিএসডি-র পুরনো সংজ্ঞা অনুযায়ী মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত শিশুদের সংখ্যা বেশী। তুলনায়, পূর্ণবয়স্ক দের জন্য নির্ধারিত সংজ্ঞা অনুযায়ী সেই সংখ্যাটা কম।

গ্রেসা এবং তাঁর সহ-গবেষকরা দেখেছেন যে, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বাচ্চা স্বাভাবিক ভাবেই সেই দুঃস্বপ্নের স্মৃতি থেকে মুক্তি পেয়েছে, এবং তা’ও এক বছরের মধ্যেই। এই শিশুরা, সমীক্ষা অনুযায়ী, পরিবার ও সমাজ তাদের বেশীমাত্রায় মানসিক আশ্রয় দিয়েছে। ক্রনিক অবসাদে ভোগা শিশুদের ক্ষেত্রে সামাজিক বা পারিবারিক বঞ্চনার প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যায়।

হ্যারিকেন-বিধ্বস্ত পরিবারগুলির উদ্দেশ্যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন গ্রেসা ও তাঁর সহকর্মীরা। তাঁদের তৈরি ওয়ার্কবুক অনলাইনে পরিষেবা দিতে প্রস্তুত। এবং, হ্যারিকেন ক্যাটরিনা, রিটা বা ইকে-র সময়েও এই নির্দেশিকা সঠিকভাবেই দায়িত্ব পালন করেছে বলে দাবী গবেষকদলের।

তথ্যসূত্র : মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়

Add Comments