দীর্ঘ ৩৭ বছর পর পুনরায় যেন প্রাণ ফিরে পেলো ভয়েজার ১ । এই ভয়জার ১ নাসা’র তৈরি সর্বাধিক গতিসম্পন্ন মহাকাশযান, পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে সৌরজগতের বাইরে নক্ষত্রমণ্ডলে বিচরণশীল মানুষের তৈরি একমাত্র যন্ত্র । প্রায় ৪০ বছর যাবত মহাকাশে ঘুরতে থাকা এই স্পেসক্র্যাফট মূলত থ্রাস্টার নামক কিছু ক্ষুদ্রকায় যন্ত্রের সাহায্যেই পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ রাখতে পারে । থ্রাস্টারগুলি মূলত জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয় । কয়েক মিলিসেকেন্ডের দহনে এরা টুকরো হয়ে স্পেসক্র্যাফটটির ঘূর্ণনে সহায়তা করে, যাতে তার অ্যান্টেনা সর্বদা পৃথিবীর অভিমুখে থাকে । ১৯৮০ সাল থেকে অকেজো হয়ে থাকা চারটি ব্যাকআপ থ্রাস্টারকে ফের ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছে নাসা ।
ভয়েজারের প্রোজেক্ট ম্যানেজার সুজান ডোড জানাচ্ছেন, “এই পুরনো থ্রাস্টারগুলির উদ্ধারে হয়তো আরও দু’তিন বছরের জন্য দীর্ঘায়িত হবে ভয়েজারের মেয়াদ” ।
২০১৪ সালের গোড়া থেকেই ভয়েজার ১-এর ‘অ্যাটিচিউড কন্ট্রোল থ্রাস্টার’গুলির খারাপ হতে শুরু করে, প্রযুক্তিবিদগণ তেমনই লক্ষ্য করেছিলেন । আর হাস্যকর যে, পৃথিবী থেকে নাসার ল্যাবরেটরি থেকে ১৩ বিলিয়ন মাইল দূরে ভয়েজারের মেরামতির জন্য কেউ ছিল না ।
ক্রিস জোন্স, রবার্ট শটওয়েল, কার্ল গ্যুর্নসে এবং টড বারবার – এই চারজন রকেট-প্রক্ষেপণ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় ভয়েজার ১ এর পুনরুদ্ধারের গল্প । তাঁদের দাওয়াই ছিল ৩৭ বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে থাকা চারটে থ্রাস্টারকে আবার কাজে লাগানো – রোগ বিচিত্র তাই ওষুধও চমৎকার ।
বৃহস্পতি, শনি এবং তাদের বিভিন্ন উপগ্রহে পৌঁছেছে ভয়েজার ১। আরও নিখুঁত উড্ডয়নের জন্য ইঞ্জিনিয়াররা ‘ট্র্যাজেক্টরি কারেকশন ম্যানুভার’ (সংক্ষেপে টিসিএম) নামক প্রযুক্তির সাহায্য নেন । যে থ্রাস্টারগুলি আকারে ও কার্যক্ষমতায় অনুরূপ, তাদের ভয়েজারের পিছনের দিকে সংযুক্ত করা হয় । ভয়েজার ১-এর শেষ গ্রহ অভিযান বলতে ১৯৮০ সালের নভেম্বর ৮-এ শনিভ্রমণ । তারপর থেকে টিসিএম প্রযুক্তির প্রয়োজন আর পড়েনি । সেই সময়ে এই টিসিএম থ্রাস্টারগুলি নিরবিচ্ছিন্নভাবেই জ্বালানির উৎস হিসেবে কাজ করেছে, কিন্তু স্পেসক্র্যাফট এর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে তাদের ভূমিকা ছিল না তেমন ।
ভয়েজারের সবকটি থ্রাস্টারই সারানো হয়েছে এয়ারোজেট রকেটডাইনে । কাসিনি বা ডন-এর মতো এমআর-১০৩ থ্রাস্টারটিও বহু মহাকাশ অভিযানের সাক্ষী থেকেছে ।
গত ২৮শে নভেম্বর, মঙ্গলবার প্রায় ৩৭ বছর পর পুনরায় কাজ করতে শুরু করেছে চারটি টিসিএম থ্রাস্টার । পরীক্ষার সাফল্যের খবর ১৯ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট পর খুশির হাওয়া এনেছে ক্যালিফোর্নিয়ার গ্লাডস্টোনে অবস্থিত নাসা’র ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কে ।
ভয়েজার ১-এর এই পুণর্জীবনলাভে স্বভাবতই আরও উৎসাহী হয়ে উঠেছেন নাসা’র বিজ্ঞানীরা । তাঁরা খানিকটা এগিয়েই ভাবছেন, ভয়েজার ২-তেও এই একই পরীক্ষা করে দেখবার ব্যাপারে । ভয়েজার ২-ও কিছুদিনের মধ্যেই ঢুকে পড়বে নক্ষত্রমণ্ডলে ।
তথ্যসূত্র : নাসা/ জেট প্রোপালেশন ল্যাবরেটরি
Add Comments