এক বন্যপ্রাণপ্রেমী নবাবের কাহিনি

অক্টোবর ২০১৮
-সৌম্যকান্তি জানা
বিজ্ঞান শিক্ষক ও বিজ্ঞান-সংগঠক

অষ্টাদশ শতকের প্রথমদিকে ভারতে যখন মুঘল সাম্রাজ্যের সূর্যাস্ত হয় হয়, তখন উত্তর ভারতে ফৈজাবাদকে রাজধানী ক’রে গ’ড়ে ওঠে একটা ছোটো রাজ্য, যা ইতিহাসে ‘অবধ’ নামে খ্যাত। এই অবধ রাজ্যের প্রথম নবাব ছিলেন মুঘল সম্রাট মহম্মদ শাহের এক উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী সাহাদাত আলি খান। মুঘলদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা আর ভারত আক্রমণকারী নাদির শাহ-কে সহায়তার মধ্যে দিয়ে পত্তন এই অবধ সাম্রাজ্যের। বর্তমান উত্তরপ্রদেশ ও নেপালের কিছু অংশ নিয়ে গড়ে উঠেছিল অবধ রাজ্য। যদিও পরবর্তী সময়ে এই রাজ্য ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’-র করদ রাজ্যে পরিণত হয়। তবে অবধের খ্যাতি ছিল তৎকালীন ভারতের সবচেয়ে সম্পদশালী রাজ্য হিসেবে। স্বভাবতই এই সম্পদের দিকে ইংরেজ শাসকের কুনজর ছিল। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে ইংরেজদের বিরুদ্ধে এই অবধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।

অস্কারজয়ী চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত হিন্দি ফিল্ম ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’ যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের মনে থাকতে পারে এই সিনেমার মুখ্য চরিত্রে প্রয়াত অভিনেতা আমজাদ খানের দুরন্ত অভিনয়। তিনি নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। কে তিনি? অবধ রাজ্যের একাদশ নবাব ছিলেন ওয়াজিদ আলি শাহ। আর এঁকে নিয়েই এই নিবন্ধের অবতারণা। ১৮৪৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি অবধের মসনদে বসেন। কিন্তু তাঁর মসনদে অভিষেকের নবম বর্ষপূর্তির দু’দিন আগে ব্রিটিশ শাসক তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত ক’রে দেয়। গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসি তাঁকে নির্বাসিত করেন। তিনি কলকাতায় এসে মেটিয়াবুরুজ অঞ্চলে তাঁর নতুন প্রাসাদ গ’ড়ে তোলেন এবং আমৃত্যু এখানেই বসবাস করেন। ওয়াজিদ আলি শাহ শুধু সুদর্শন নবাবই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বহুগুণে গুণাণ্বিত। তিনি ছিলেন সুশাসক, সুকবি, সুনাট্যকার এবং ধ্রুপদী শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে প্রবল অনুরাগী। যদিও নারীবিলাসী হিসেবে তাঁর চারিত্রিক দুর্বলতা ছিল, কিন্তু কোনওদিন মদ্যপান করেননি। আর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল বন্যপশু ও পাখিদের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা। তাঁর রাজত্বকালের আগে কিংবা পরে ভারতের কোনও শাসকের মধ্যে এমন বন্যপ্রাণ-প্রেম কখনও দেখা যায়নি।

অবধের রাজধানী লখনৌ থেকে বিতাড়িত ওয়াজিদ আলি শাহ তাঁর ধনসম্পদসহ মন্ত্রী-সান্ত্রী, মিত্র-অমাত্য, কর্মচারী, নর্তকী, গায়ক, শিল্পী সবাইকে নিয়ে স্টিমার বোঝাই ক’রে নদীপথে রওনা হলেন কলকাতায়। শোনা যায় সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ছিল প্রায় ৬০০০। আর অবশ্যই সাথে নিলেন লখনৌয়ের সংগ্রহশালা থেকে বেশ কিছু পাখি ও বন্যপ্রাণী। গন্ডার, জিরাফ, হাতি ইত্যাদি বড়ো প্রাণীদের আনা সম্ভব না-হলেও ২৩টি বাঘ, সিংহ, চিতাবাঘ, হরিণ, ভালুক, বানর ইত্যাদি প্রাণী স্টিমারে ক’রে এনেছিলেন। লখনৌতে তাঁর পাখিশালায় প্রায় ১৮ হাজার পায়রা ছিল। কলকাতায় আসার পথে বিভিন্ন পাখির সাথে অনেক পায়রাও এনেছিলেন। তবে লখনৌতে তাঁর বিশাল প্রাসাদ, সম্পত্তি ও রাজত্ব ছেড়ে আসার জন্য যত না তিনি ব্যথিত ছিলেন, তার থেকে অনেক বেশি ব্যথিত ছিলেন তাঁর বন্যপ্রাণী সংগ্রহশালাটিকে ছেড়ে আসার জন্য। বন্যপ্রাণীরা ছিল তাঁর প্রাণের চেয়েও প্রিয়। তিনি কলকাতায় যাত্রা করলে ইংরেজরা তাঁর পশুশালাটি নিলামে বিক্রি ক’রে দেয়। শোনা যায়, পশুদের যখন এক এক ক’রে নিলাম করা হচ্ছিল তখন পশুশালার তত্ত্বাবধানকারীরা অঝোরে কেঁদেছিল।

যাই হোক, ১৮৫৬ সালের ১৩ মে কলকাতার দক্ষিণে মেটিয়াবুরুজ অঞ্চলে গঙ্গার বিচালি ঘাটে তাঁর স্টিমার এসে ঠেকল। তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন রাজত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য নিজে ইংল্যান্ডে গিয়ে রানি ভিক্টোরিয়ার সাথে দেখা করবেন। কিন্তু তাঁর স্বাস্থ্যের কথা ভেবে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তাঁকে দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রা করতে নিষেধ করেন। ফলে তিনি মেটিয়াবুরুজে ইংরেজ শাসকের ঠিক ক’রে দেওয়া বাড়িতে আস্তানা গাড়তে মনস্থ করেন। ঠিক পরের বছর, অর্থাৎ ১৮৫৭ সালে ইংরেজ শাসকের বিরুদ্ধে ভারতে প্রথম ‘মহাবিদ্রোহ’ শুরু হয়। এই বিদ্রোহের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে ওঠে পুরনো অবধ রাজ্যের রাজধানী লখনৌ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রমাদ গোনে। ভারতে অধিকাংশ শ্বেতাঙ্গের বসবাস তখন কলকাতায়। নবাবের সাথে এসেছিল প্রায় দু’তিন হাজার সেনা। সুতরাং ঝুঁকি এড়াতে ইংরেজরা তাঁকে ফোর্ট উইলিয়ামে অবরুদ্ধ ক’রে রাখে। অবশ্য মহাবিদ্রোহের অবসানে তাঁকে মুক্ত ক’রে দেওয়া হয়। এবার তিনি তাঁর নতুন ‘রাজধানী’ মেটিয়াবুরুজকে মিনি-লখনৌ হিসেবে গ’ড়ে তুলতে প্রয়াসী হন। সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র ছাড়াও ব্রিটিশ শাসিত ভারতের তদানীন্তন রাজধানী কলকাতার অদূরে মেটিয়াবুরুজে প্রথম বন্যপ্রাণী সংগ্রহশালা গড়ে তোলেন ওয়াজিদ আলি শাহ।

অর্থের তেমন অভাব তাঁর ছিল না। তাছাড়া পশুদের জন্য অর্থ ব্যয় করতে তিনি বরাবরই ছিলেন দরাজহস্ত। তিনি ইংরেজ বন্যপ্রাণী বিক্রেতাদের কাছ থেকে চড়া দামে একের পর এক পশু কিনতে শুরু করলেন। ইংরেজরা ভয় পেল, যদি এই সব প্রাণী কোনওভাবে বাইরে বেরিয়ে আসে, তবে তা থেকে বিপদ ঘটতে পারে। তাই ইংরেজরা ওয়াজিদ আলি শাহকে পশু কেনা থেকে বিরত করতে চেষ্টা করে। কিন্তু নবাব তাতে মোটেই কর্ণপাত করেননি। গন্ডার, জিরাফ, ব্যাকট্রিয়ান উট, জেব্রা, বাঘ ইত্যাদি পশু এবং সারস, উটপাখি, সাদা ময়ূর, রেশমি-ডানা-পায়রা ইত্যাদি রকমারি পাখী তিনি কিনতে থাকেন। এদের দেখভাল করার জন্য প্রচুর লোকও নিয়োগ করতে থাকেন। আর তিনি পশুদের থাকার জন্য তৈরি করান মুক্ত পশুশালা। যেসব পশু হিংস্র নয় তাদের থাকার ব্যবস্থা করেন প্রাচীর-দিয়ে-ঘেরা খোলা জায়গায়। কেবল হিংস্র পশুদের জন্য লোহার খাঁচার ব্যবস্থা করেন। বিভিন্ন রকমের জলচর পাখি ও কচ্ছপদের জন্যও খোলা জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করেন। গর্ত সমন্বিত খোলা জায়গাতে সাপেদের থাকার ব্যবস্থা করেন। এমনকি বেশ কিছু জলাশয় খনন ক’রে সেখানে নানারকম মাছ চাষেরও ব্যবস্থা করেন। সত্যি বলতে কি, নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ হলেন ভারতে প্রথম মুক্ত পশুসংগ্রহশালা ধারণার পথিকৃৎ।

ওয়াজিদ আলি শাহ শুধু পশুদের থাকার ব্যবস্থা করেই ক্ষান্ত হলেন না, তিনি তাদের দেখভাল করার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন অনেক কর্মচারী নিয়োগ করলেন। কোনও রোগ যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য পশু-সংগ্রহশালাটিকে পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকতেন। তিনি নিজে যেমন পশুপাখি পালনের মাধ্যমে মনের খোরাক জোগাতেন, তেমনই ভ্রমণার্থীদের তাঁর পশু-পাখি সংগ্রহশালা দেখার অনুমতিদান ক’রে তাদেরও আনন্দ দিতেন। ইংরেজ শাসক আলিপুরে ১৮৭৫ সালে চিড়িয়াখানা তৈরি করার আগে বাংলার সাধারণ মানুষ নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের তৈরি চিড়িয়াখানায় বন্যপ্রাণীদের চাক্ষুষ দেখার মাধ্যমে জ্ঞানার্জনের সুযোগ পেয়েছিল। ওয়াজিদ আলি শাহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু ও পাখির মধ্যে সংকরায়নের চেষ্টাও করেন ব’লে জানা যায়। শোনা যায়, তিনি পায়রার সংকরায়ণ ঘটিয়ে নতুন জাতের এক সবুজ পায়রা সৃষ্টি করেন। তখন বন্য পশুকে আবদ্ধ ক’রে পালন করার বিজ্ঞান অন্ততঃ এদেশে চালু ছিল না। আর সংকরায়ণের তো প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ কেবল উৎসাহে ভর ক’রে এদেশে অনভিজ্ঞ পশুপাখিপালকদের সাহায্যে যেভাবে বিজ্ঞানসম্মত পশুপাখি পালন ও তাদের কৃত্রিম প্রজনন ঘটানোর চেষ্টা করেন তা আজকের দিনে ভাবলে বিস্মিত হতে হয়।

ওয়াজিদ আলি শাহের এই অসামান্য পশু-পাখিপ্রেমের কথা অজানাই থেকে যেত যদি না ঊনবিংশ শতকের প্রখ্যাত সাহিত্যিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক তথা ঐতিহাসিক আবদুল হালিম শারার ‘গুজিস্তা লখনৌ’ লিখতেন। ইনি তাঁর শৈশব মেটিয়াবুরুজে কাটিয়েছিলেন ব’লে নবাবের চরিত্রের নানা দিক তিনি সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছিলেন। ইংরেজ লিখিয়েরা সবাই ওয়াজিদ আলি শাহকে এক নারীসঙ্গলোভী ও বিলাসপ্রিয় নবাব হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর চরিত্রের কোনও ভালো দিকই তাঁরা তুলে ধরেননি। আবদুল হালিম শারার তাঁর বিখ্যাত বই ‘গুজিস্তা লখনৌ’-তে সবিস্তারে মেটিয়াবুরুজে ওয়াজিদ আলি শাহের পশুপাখি সংগ্রহশালা সম্বন্ধে আকর্ষনীয় বিবরণ দিয়েছেন। আর এটাই হল ওয়াজিদ আলি শাহের পশুপাখিপ্রেমের একমাত্র প্রামাণ্য দলিল। শারার লিখেছেন, নবাব তাঁর পশুপাখিদের পালনের জন্য মাসে ৯০০০ টাকা খরচ করতেন। অবাক লাগে, দেড়শো বছর আগে শুধু পশুপাখি পালনের জন্য এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় যিনি করতে পারেন, তাঁকে নিয়ে কিন্তু আমাদের দেশীয় ঐতিহাসিকেরা খুব বেশি মাথা ঘামাননি।

ওয়াজিদ আলি শাহ তাঁর সর্পশালাটি কী অসামান্য বুদ্ধি প্রয়োগ ক’রে বানিয়েছিলেন, তা আমরা ‘গুজিস্তা লখনৌ’ থেকে জানতে পারি। তিনি তাঁর প্রাসাদ ‘শাহেনশা মঞ্জিল’-এর সামনে তৈরি করেন ওই সর্পশালা। বিস্তৃত ওই সর্পশালার মাঝখানে নির্মাণ করেছিলেন একটা কৃত্রিম পাহাড়; সেই পাহাড়ের ভেতরে পাইপ দিয়ে বানিয়েছিলেন অনেক গর্ত; পাহাড়ের চারদিকে তৈরি করেন একটা পরিখা – সেই পরিখার পরিধি ছিল খুব খাড়া ও পিচ্ছিল যাতে সাপেরা কোনওভাবেই পরিখার পাড় বেয়ে উঠতে না পারে। সাপেদের খাবার হিসেবে পরিখার জলে চাষ করা হত প্রচুর ব্যাঙ। পাহাড়ের উপর সাপেদের ছেড়ে দিয়ে আসা হত। ছয় থেকে নয় ফুট লম্বা বিভিন্ন জাতের সাপ ছাড়া হত। তারা পরিখার জলে সাঁতার দিয়ে ব্যাঙ ধরত। সাপ-পালনের এমন ব্যবস্থা ওই সময় ইউরোপেও কোথাও ছিল না। বহু ইউরোপীয় ওই সর্পশালা দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেত। তারা সর্পশালার ছবি তুলত, আর ডায়েরিতে বিবরণ লিখে নিত।

১৮৮৭ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর ওয়াজিদ আলি শাহের প্রয়াণ হলে তাঁর উত্তরসূরীরা ইংরেজ শাসকের ইচ্ছানুসারে মেটিয়াবুরুজের সমস্ত পশুপাখি নিলামে বিক্রি ক’রে সমগ্র পশুপাখিশালা ধূলিসাৎ ক’রে দেয়। আজ সেই পশুপাখিশালার আর চিহ্নমাত্র নেই। আলিপুরে দেশের প্রথম চিড়িয়াখানা ‘ক্যালকাটা জুলজিক্যাল গার্ডেন’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৭৫ সালে। নবাব যখন প্রয়াত হন তখন সেই চিড়িয়াখানার বয়স মাত্র ১২ বছর। রামব্রহ্ম সান্যাল তখন ‘ক্যালকাটা জুলজিক্যাল গার্ডেন’-এর প্রথম স্থায়ী সুপারিন্টেনডেন্ট পদে আসীন। তাঁর লেখা ‘Handbook of the Management of Animals in Captivity in lower Bengal’ বই থেকে জানা যায় ওয়াজিদ আলি শাহের পশুপাখিশালা থেকে ‘ক্যালকাটা জুলজিক্যাল গার্ডেন’-এর জন্য এক জোড়া ইউরোপীয় বাদামি ভালুক, একটি পরিণত স্ত্রী জাভার গন্ডার, একটি ব্যাকট্রিয়ান উট, এক জোড়া বৃহৎ পানকৌড়ি এবং বেশ কয়েকটি ভারতীয় নীলকন্ঠ পাখি কেনা হয়েছিল। তিনি লিখেছেন, পশু ও পাখিগুলির স্বাস্থ্য ছিল খুবই ভালো। এ থেকে নিশ্চিত ক’রেই অনুমান করা যায় যে, ওয়াজেদ আলি শাহ অতি যত্নসহকারে তাঁর প্রিয় পশুপাখিদের পরিচর্যা করতেন।

পশুপাখিদের শুধু ভালোবাসলেই তো হয় না, তাদের সঠিক পরিচর্যার জন্য চাই সঠিক ব্যবস্থাপনা – যা দেড়শো বছর আগে বিস্ময়করভাবে দেখিয়ে গিয়েছেন ওয়াজিদ আলি শাহ। সারা দেশের বিভিন্ন রাজাদের ক্ষেত্রে যখন নিজেদের বীরত্ব দেখাতে জাঁকজমক সহকারে পশু শিকারে বেরিয়ে নির্বিচারে বন্যপ্রাণী নিধন করাই ছিল রীতি, ঠিক সেই সময় ওয়াজিদ আলি শাহের মধ্যে বন্যপ্রাণীদের প্রতি এত ভালোবাসা কীভাবে এল তা সত্যিই গবেষণার বিষয়। তাঁর কাছে ছিল না কোনও প্রাণিবিজ্ঞানী বা প্রাণিবিজ্ঞানের বই। ছিল না কোনও বন্যপ্রাণী পালনে অভিজ্ঞ লোক। তা সত্ত্বেও তিনি হলেন দেশের প্রথম চিড়িয়াখানার রূপকার। ওয়াজিদ আলি শাহ বলতেন, তাঁর পরিবারের থেকে বন্যপ্রাণীরা অনেক বেশি প্রিয়। ‘লখনৌ স্টেট মিউজিয়াম’-এ রক্ষিত সমসাময়িক চিত্রকরদের অঙ্কিত নবাবের বিভিন্ন চিত্র সেই প্রমাণ দেয়। বন্যপ্রাণীদের নিজস্ব বাসস্থানের বাইরে বিজ্ঞানসম্মতভাবে পালন করার এই গৌরবময় ইতিহাসকে আমাদের দেশে আদৌ গুরুত্বসহকারে চর্চা করা হয়নি। নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের প্রয়াণের ১৩১ বছর পরেও কি তাঁর এই পশুপাখিপ্রেম নিয়ে নিবিড় চর্চা হবে না?

Add Comments