পুরুষের সংখ্যাধিক্যে বিপদের মুখে সমাজ

৩ জানুয়ারী, ২০১৮

পুরুষতান্ত্রিক সমাজে শিশুপুত্রের চাহিদা বেশী। আনুপাতিক ভাবে পুরুষের সংখ্যা যদি এই হারেই বৃদ্ধি পায়, তাহলে বিপরীত লিঙ্গের যৌনসঙ্গীর অভাবে সমাজে ক্রমাগত মানসিকভাবে কোণঠাসা হবে পুরুষজাতি। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের নতুন এক গবেষণায় এমনই আশঙ্কার কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা। বিবাহের পরিসর যতই কমবে, অসামাজিক আচরণ-হিংসা-পরিকল্পিত অপরাধ প্রবণতা ততই বাড়বে পুরুষের মধ্যে। বিপন্ন হবে সামাজিক সুরক্ষা ও স্থিতিশীলতা।

ইউ সি এল ইন্সটিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের ডঃ থেরেসে হেসকেথ এবং চীনের ঝেজিয়াং নরমাল ইউনিভার্সিটি-র ডঃ ঝু ওয়েই জিং মিলিতভাবেই গবেষণাটি পরিচালনা করেন। তাঁরা সতর্ক করছেন লিঙ্গ নির্বাচনের বিরুদ্ধে এবং পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতির মানসিকতার পরিবর্তন দরকার বলেই তারা মনে করছেন।

ডঃ হেসকেথ জানাচ্ছেন, “ বহিরাগত কোন বিকৃতি না হলে, পুরুষ ও মহিলার সংখ্যাগত অনুপাত আশ্চর্যজনক ভাবেই ধ্রুবক থাকে। শিশুপুত্রের আকাঙ্ক্ষায় মানুষ এই প্রাকৃতিক লিঙ্গ অনুপাতে সমস্যা সৃষ্টি করে। বিশেষত এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকায়। লিঙ্গ নির্ধারণ করে গর্ভপাত এবং শিশুকন্যাদের প্রতি বৈমাত্রেয়সুলভ আচরণের ফলে নারী মৃত্যুর হারও বেশী। মহিলাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা ক্রমশ বাড়লেও, কন্যাভ্রুন হত্যার অভিশাপে সেই উদ্যোগগুলি ব্যর্থ হচ্ছে। চীন এবং ভারতে প্রায় ৮০ মিলিয়ন মহিলা নিখোঁজের তালিকায়।”

Sex ratio graph of India – 2011

আগামী কুড়ি বছরে এই দুটি দেশে স্ত্রীলোকের তুলনায় ১২-১৫% অধিক পুরুষ জন্ম নেবে। বৈবাহিক সম্পর্কের সুযোগ তাদের থাকবে না। আমরা এমন এক সমাজে বাস করি যেখানে বিবাহ ও পরিবার’ই সামাজিক মর্যাদা, মানসিক সুরক্ষার একমাত্র মাপকাঠি। দুর্ভাগ্যজনক ভাবেই এই অতিরিক্ত পুরুষের মধ্যে অধিকাংশই নিম্নমধ্যবিত্ত স্বল্পশিক্ষিত গ্রামীণ কৃষক।

বিবাহযোগ্যা নারীর সংখ্যা কমতে থাকলে, যেসব নারী বিবাহের জন্য প্রস্তুত, তারা আকর্ষণীয় এবং যোগ্যতম পুরুষকেই বিয়ে করবে। অবশিষ্ট পুরুষদের ভাগ্যে জীবনব্যাপী বিরহ। যেমন, চীনদেশে ২৮-৪৯ বছর বয়সী অবিবাহিত মানুষের মধ্যে ৯৪%-ই পুরুষ। এবং তাদের মধ্যে আবার ৯৭% পুরুষ হাইস্কুলের গণ্ডি পেরোয়নি। যৌন সক্ষমতা প্রকাশের সুযোগও প্রত্যাশিতভাবেই কম তাদের ক্ষেত্রে।

লিঙ্গ বৈষম্য যদি এই হারেই চলতে থাকে, তবে সমাজে অপরাধ প্রবণতা বাড়বে। বিশেষত, লিঙ্গকেন্দ্রিক হিংস্র অপরাধ। পরিকল্পিত নাশকতার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি ঘটবে।

Sex ratio graph of china – 2011

যদিও, স্ত্রীলোকের সংখ্যা কমতে থাকলে, তাদের সামাজিক সম্মান বাড়ার সম্ভবনা আছে। নারীর প্রতি সামাজিক মূল্যবোধের পরিসরটি তাদের ব্যবহার করাই উচিৎ। মেয়েদের মতামতের গুরুত্বও যেহেতু বাড়বে, তাই শিশুকন্যার প্রতি সহজাত ভালোবাসাও বাড়বে। এই পথেই হয়তো এই লিঙ্গের অনুপাত পুনরায় স্থির হওয়ার দিকে যাবে। তবে, কন্যাভ্রুন হত্যার বিরুদ্ধে সচেতনতার দরকার এখনও আছে এবং তা বলিষ্ঠতর করাই নীতি নিয়ামকদের লক্ষ্য হওয়া প্রয়োজন।

দক্ষিণ কোরিয়াতে লিঙ্গ অনুপাতের উন্নতি হয়েছে কিছুটা। চীনদেশেও লিঙ্গ নির্বাচন সংক্রান্ত তথ্য যথেষ্টই উৎসাহব্যাঞ্জক। ইদানীং একটি জাতীয় সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৩৭% মহিলার লিঙ্গ বৈষম্যের মানসিকতা নেই; ৪৫% মহিলা জানিয়েছেন একটি পুত্রসন্তান এবং একটি কন্যাসন্তান থাকলেই তা আদর্শ পরিবার। একটি সন্তানের পক্ষে (পুত্র বা কন্যা) সওয়াল করেছেন সমসংখ্যক মহিলা। চিন্তাভাবনার মৌলিক পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে, এটাই আশার কথা। যদিও সভ্যতার পাপে ইতিমধ্যেই যুবক ও শিশুপুত্রদের মাথায় ঘনিয়ে আছে কর্মফলের অভিশাপ।

তথ্যসূত্র : ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন

Add Comments