কোনো কোনো তারা তাদের জীবনের অন্তিম পর্যায়ে ‘সুপারনোভা’ নামের এক বিপুল উজ্জ্বল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফেটে পড়ে। সুপারনোভা ঘটে গেলে সেই তারাটির সমস্ত উপাদান ছড়িয়ে পড়ে মহাবিশ্বে, বিশাল ব্যপ্তি নিয়ে। ক্ষুদ্র কণায় ভেঙে যায় তারাটি। এই উজ্জ্বলতা প্রায় দশ কোটি সূর্যের মোট উজ্জ্বলতার সঙ্গে সমান হয়ে থাকে।
কিন্তু ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক খবর অনুসারে বিজ্ঞানীরা সদ্য এমন এক তারার সন্ধান পেয়েছেন, যার জীবনে এই অন্তিম পর্যায়টি ঘটে চলেছে একাধিকবার, এক অর্থে সে মৃত্যুবরন করার পরেও আবার ফিরে পাচ্ছে জীবন।
তারাটির পোশাকি নাম iPTF14hls, ভারী খটোমটো নাম, সন্দেহ নেই। কিন্তু আরই অস্বাভাবিক তার আচরণ। তার সন্ধান প্রথম মেলে ২০১৪ সালে, ‘ইন্টারমিডিয়েট ইন্টারন্যাশানাল পালোমার ট্রানজিয়েন্ট ফ্যাক্টরি’ নামের এক সংস্থার কল্যাণে, যে সংস্থা টেলিস্কোপের সাহায্যে আকাশকে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করে চলে নিয়মিত, আর প্রতিটি অংশের ছবি তুলে বিশ্লেষণ করে।আমাদের এই ‘আকাশগঙ্গা’ ছায়াপথ (বা ‘মিল্কিওয়ে’ গ্যালাক্সি, যে গ্যালাক্সি বা তারাপুঞ্জের এক অতি সাধারণ সদস্য সূর্য) থেকে পাঁচশো মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে সেই তারার অবস্থান। বিজ্ঞানীরা ২০১৪সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকেই এই তারাটির অস্বাভাবিক আচরণ নিয়মিতভাবে খেয়াল করে আসছিলেন। তারাটি, দেখা গেছে ২০১৪ সালের পর প্রায় দু বছরে অন্তত পাঁচবার তার উজ্জ্বলতা কমিয়েছে আবার বাড়িয়েছে। প্রত্যেকবারে সে বেশ অনেক দিন ধরেই অত্যাধিক উজ্জ্বল হয়ে থেকেছে,এবং এরপরেকিছু সময় নিয়ে তার উজ্জ্বলতা কমিয়ে ফেলেছে। অন্য তারাদের ক্ষেত্রে সুপারনোভা ঘটার জন্য যতটা সময় লাগে, এই তারাটির ক্ষেত্রে সময় লেগেছে তারও বেশি, এর উজ্জ্বলতা কমার হারও অন্য তারার চেয়ে কম, যেটাও অবাক করার মতো ব্যাপার।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল, ১৯৫৪ সালের একটি ছবিতে আকাশের ঠিক একই স্থানে একটা উজ্জ্বল বিস্ফোরণের চিহ্ন রয়েছে, যেটা ওই তারাটিরই বিস্ফোরণে ফেটে পড়ার ইঙ্গিত দেয়, বিজ্ঞানীরা প্রায় পঁচানব্বই শতাংশ নিশ্চিত যে সেটাও এই তারাটিই ছিল। আবার ১৯৯৩ সালের একটি ছবিতে সে উজ্জ্বলতা অনুপস্থিত।
তারাদের বিস্ফোরণ সংক্রান্ত একটি তত্ত্ব থেকে আমরা জানতে পারি যে একটা তারা যদি খুব বেশি ভরবিশিষ্ট হয় (সূর্যের ভরের অন্তত একশো গুণ) তবে তার জীবনচক্রে একাধিকবার বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। অর্থাৎ সে একাধিকবার তার ওজন কমিয়ে ফেলতে পারে দেহের মালমশলা কিছু পরিমাণে ত্যাগ করে, তবে সুপারনোভা কিন্তু তার ক্ষেত্রেও একবারই ঘটে, সেটাই তার একদম অন্তিম দশা, এবং সে সুপারনোভার পরে পরিণত হয় ব্ল্যাক হোলে। কিন্তু এই ওজন কমিয়ে ফেলার ব্যাপারটা খাতায় কলমেই রয়েছে, বিজ্ঞানীরা এই তত্ত্বের স্বপক্ষে এখনও কোনো উদাহরণ দেখতে পান নি।
আমাদের আলোচ্য তারাটির ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি ঘটে নি, এটা বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত। তাঁরা আরও সময় নিয়ে, আরও সূক্ষ্মতার সঙ্গে এই তারাটিকে পর্যবেক্ষণ করতে চান। দেখতে চান, আবার কী খেল দেখায় তারাটি।
তাই, কোনো কোনো খবরে তারাটিকে যে ‘জোম্বি স্টার’ নামে ডাকা হচ্ছে, তাতে খুব ভুল কিছু বলা হচ্ছে না।
তথ্যসূত্র : জার্নাল অফ বায়োলজি
Add Comments