কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে অধ্যাপক স্টিফেন হকিং
হকিং শুধু বিজ্ঞানী হিসাবে নন, সামাজিক মানুষ হিসাবেও আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র। মার্কিন-ব্রিটিশ শক্তির ২০০৩ সালের ইরাক আক্রমণকে যুদ্ধাপরাধ বলতে তিনি পিছপা ছিলেন না। জলবায়ু পরিবর্তনের দিকে তিনি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন এবং সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ উন্নত দেশগুলির অনীহার তিনি কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। হকিং পরমাণু অস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। ধর্মের অবৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার তিনি সোচ্চারে বিরোধিতা করেছিলেন। খ্রিস্টধর্মের ডারউইনবাদের বিরোধিতার তিনি কঠোর সমালোচক। ১৯৯০-য় তাঁকে ‘নাইটহুড’-এ ভূষিত করার প্রস্তাব উঠলেও, গবেষণার খাতে সরকারী বরাদ্দের অপ্রতুলতার বিরুদ্ধে হকিং নাকচ করে দেন সেই সম্ভাবনা।
১৯৬৫-র ১৪ই জুলাই, বিয়ের দিন স্টিফেন হকিং ও জেন উইল্ড
বিজ্ঞানের ইতিহাস বিষয়ে তিনি উৎসাহী ছিলেন, পদার্থবিদ্যা ও অঙ্কের ইতিহাসের ক্ষেত্রে তাঁর সম্পাদিত বই যথাক্রমে ‘অন দি শোল্ডারস অফ জায়ান্টস’ এবং ‘গড ক্রিয়েটেড দি ইন্টিজারস’ পড়ে আমরা অনেকেই এই দুই বিজ্ঞানের ইতিহাস বিষয়ে শিক্ষালাভ করেছি। কন্যা লুসির সঙ্গে ছোটদের জন্য লেখা তাঁর কল্পবিজ্ঞান কাহিনীগুলিও খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণেও তিনি উৎসাহী ছিলেন, কিন্তু তা বলে সাধারণের জন্য লিখতে গিয়ে তিনি বিজ্ঞানের তথ্য বিষয়ে কোনো সমঝোতা করেন নি।
সেন্ট অ্যাবান বিদ্যালয়ে স্টিফেন হকিং ( ডানদিক থেকে প্রথম )
বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার সমর্থক হকিং-এর কাছে পোপের সামনেই তাঁর বিরোধিতা করা হয়তো খুব সাধারণ ব্যাপার, কিন্তু আমাদের কাছে তাঁর এই সাহস শ্রদ্ধা আকর্ষণ না করে পারে না। হকিং, মৃত্যুর পরে আত্মা বা চৈতন্যের অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন না। তাঁর মতো বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়না, তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর গবেষণায়, তাঁর ছাত্রদের মধ্যে, সাধারণ মানুষের জন্য বিজ্ঞান বিষয়ে তাঁর লেখায়।
১৮ই এপ্রিল, ২০১৬-য় হাভার্ডের স্যান্ডারস্ থিয়েটারে বক্তৃতা দিচ্ছেন স্টিফেন হকিং
Add Comments